ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকছে না সাত কলেজ
- আপলোড সময় : ২৮-০১-২০২৫ ০১:০৪:৩৮ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৮-০১-২০২৫ ০১:০৪:৩৮ অপরাহ্ন
* মধ্যরাতে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপে রণক্ষেত্র নীলক্ষেত এলাকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে সরকারি সাত কলেজ। ২০২৪-২৫ সেশন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ হচ্ছে। গত রোববার রাতে দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাতের পর গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
উপাচার্য লাউঞ্জের পাশে আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান একটি লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজ বিষয়ে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় ইতোমধ্যে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। এছাড়া ধৈর্য ধারণ, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে আমার সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হলো; ১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের সম্মানজনক পৃথকীকরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২. অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক বছর এগিয়ে এনে এ বছর থেকেই অর্থাৎ ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি না নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। ৩. শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, গত ২৯ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সভায় জোর সুপারিশ করা হয়। ৪. ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, আসন সংখ্যা ও ভর্তি ফি নির্ধারণসহ যাবতীয় বিষয়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। ৫. যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীনে রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীল থাকবে, যাতে তাদের শিক্ষাজীবন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান উপাচার্য।
উক্ত সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদের সভাপতিত্বে উপউপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশা, উপউপাচার্য (শিক্ষা) মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, কলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ছিদ্দিকুর রহমান খান, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন আব্দুস সালাম, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন রাশেদা ইরশাদ নাসির, প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ আব্দুলাহ আল মামুনসহ বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মুন্সী শামস উদ্দীন আহমেদ, হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলাম, কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) আমজাদ হোসেন শিশির এবং সাত কলেজের অধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত রোববার মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছেই। দু’পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ অনেকেই আহত হয়েছেন। গত রোববার দিবাগত রাতে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা ঢাবি ও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় তারা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ নীলক্ষেত মোড়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেন।
এর আগে গত রোববার সন্ধ্যায় পাঁচ দফা দাবি নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রো-ভিসির সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তিনি ‘দুর্ব্যবহার’ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এমন অভিযোগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সায়েন্স ল্যাবরটরি মোড় অবরোধ করেন তারা। এক পর্যায়ে প্রো ভিসি ড. মামুন আহমেদকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাতে সাড়া না পেয়ে গত রোববার রাত ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রো ভিসির বাসভবন ঘেরাও করার ঘোষণা দিয়ে মিছিল নিয়ে যান সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগে থেকে নীলক্ষেত সংলগ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ’ প্রবেশমুখে অবস্থান নেন।
দীর্ঘক্ষণ মুখোমুখি অবস্থানের পর ঢাবি শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় পিছু হটেন সাত কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে পুলিশের ধাওয়া ও সাউন্ড গ্রেনেডের মুখে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের সামনে এসে অবস্থান নেয়। পরে তারা আবার সংগঠিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। নিউ মার্কেটের সামনের সড়কে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত এক পুলিশ সদস্যসহ দুই পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সবার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন সাত জন শিক্ষার্থী। এদের প্রত্যেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আহতদের মধ্যে রয়েছেন শামীম, রিপন, ইমতিয়াজ, মনিরুল, ইসমাইল, সাগর ও মাহিন। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের ভর্তি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা মাহবুব গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এরপর চার ঘণ্টার মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন করে একদিনে মধ্যে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার আলটিমেটাম দিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষর্থীরা। ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে প্রতিষ্ঠানটির শহিদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে এ আলটিমেটামের ঘোষণা দেয়া হয়। এরপরই বেলা দুপুর সাড়ে ১২টায় সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে সরকারি সাত কলেজ এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ